মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২০ অপরাহ্ন
পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে একাদশ শ্রেণির ক্লাস। এর আগে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অনলাইনে আবেদন নিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। প্রথম দফায় আবেদন নেওয়া শুরু হবে ৮ থেকে ১৫ ডিসেম্বর।
বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় এ সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
সভায় করিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবুবকর ছিদ্দীকসহ সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, সভায় কলেজ ও মাদ্রাসায় সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগ নিয়ে খোদ শিক্ষামন্ত্রী ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এজন্য এবার অতিরিক্ত ফি গ্রহণের অভিযোগ বেনামে জমা পড়লেও তা আমলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
পাশাপাশি নীতিমালায় সরকারি কলেজের জন্য যে ফি নির্ধারিত আছে, তা যৌক্তিক হারে বাড়ানোর ব্যাপারে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। কোন খাতে কত টাকা নির্ধারণ করা হবে-তা নির্ধারণে এ কমিটি সুপারিশ করবে।
এদিকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর সিদ্ধান্ত হলেও সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকা পাঠ্যবই মুদ্রণের কোনো খবর নেই। সাধারণত এই স্তরের চারটি পাঠ্যবই রচনা করে সরকার। এগুলো হচ্ছে-বাংলা সাহিত্য, বাংলা উপন্যাস ও নাটক, ইংরেজি মূল বই (ইংলিশ ফর টুডে) এবং আইসিটি বিষয়।
এসব বই বেসরকারি প্রকাশকদের মাধ্যমে এজেন্ট নিয়োগ করে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। এর বিনিময়ে বই প্রতি নির্দিষ্ট হারে রয়্যালটি (স্বত্ব) হিসাবে অর্থ নেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। অবশিষ্ট পাঠ্যবই বেসরকারি প্রকাশকরা রচনা করে এনসিটিবি থেকে প্রকাশ ও বাজারজাতের অনুমোদন নেয়।
এবারে শিক্ষাক্রম অভিন্ন থাকায় পাঠ্যবইয়ে কোনো পরিবর্তন আসছে না। অর্থাৎ আগে অনুমোদন পাওয়া প্রকাশকরাই বইগুলো বাজারে ছাড়বেন। কিন্তু সরকারি বইয়ের কোনো খবর না থাকায় অন্য বিষয়ভিত্তিক বই কবে বাজারে যাবে সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিটিবির সচিব নাজমা আখতার যুগান্তরকে বলেন, ‘এনসিটিবির তত্ত্বাবধানে থাকা চারটি বইয়ের এজেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে। ১ ফেব্রুয়ারি একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরুর আগেই বই বাজারে পাওয়া যাবে। এবার যাতে শিক্ষার্থীদের নকল বই কিনতে না হয় তা মনিটরিং করা হবে। কেননা, নকল বইয়ের কারণে সরকারও রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।’
২৮ নভেম্বর এবারের এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করা হয়। এতে পাশ করেছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন। এছাড়া গত বছর ভর্তি না হওয়া আরও প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থী আছে। সবমিলে এবারে প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থীর ভর্তি কার্যক্রমে যোগ দেওয়ার কথা।
তবে এসএসসি পাশের পর অনেকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ কারিগরি শিক্ষার বিভিন্ন মাধ্যমে চলে যায়। সাধারণ শিক্ষা আর মাদ্রাসায় সেই হিসাবে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করে। অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষা আর মাদ্রাসায় ২৪ লাখ আসন আছে। কারিগরিতে শিক্ষার্থী আছে ৯ লাখের বেশি। এই হিসাবে এবারে ভর্তিতে আসন সংকট হবে না।
সূত্র জানায়, সাধারণ শিক্ষায় এবারও মোট তিন দফা আবেদন নেওয়া হবে। প্রথম দফায় আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করা হবে ১৫ ডিসেম্বর। এভাবে আরও দুদফা আবেদন নেওয়া হলেও ভর্তির কাজ শেষ করা হবে ২৬ জানুয়ারি। ১ ফেব্রুয়ারি ভর্তিকৃতদের উচ্চ মাধ্যমিকের জীবন শুরু হবে। ভর্তিসংক্রান্ত বিস্তারিত নীতিমালা সোমবার প্রকাশ করা হবে।
তবে এবার ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের সীমারেখা তুলে নেওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে বড় একটি সিদ্ধান্ত। শিক্ষার্থীরা এবারও এসএমএসে কোনো আবেদন করতে পারবে না। অনলাইনে আবেদনে সর্বনিম্ন ৫টি আর সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ পছন্দ তালিকায় দেবে। ভর্তির আসন বণ্টন করা হবে সম্পূর্ণরূপে মেধার ভিত্তিতে। অর্থাৎ বোর্ডে সংরক্ষিত শিক্ষার্থীদের নম্বরের ভিত্তিতে সফটওয়্যার স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সিট বণ্টন করবে।
ম্যানুয়ালি হওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীরা যে প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পাশ করেছে, সেখানেই তার ভর্তিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আবেদনে একটি মোবাইল ফোন নম্বর দিতে হবে। একই মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে একাধিক আবেদন করলে সফটওয়্যার ধরে ফেলবে। এটি করা হয়েছে মূলত স্কুল অ্যান্ড কলেজগুলো যাতে তাদের ছাত্রছাত্রীদের জোরপূর্বক উচ্চ মাধ্যমিকে পড়তে বাধ্য করতে না পারে। এছাড়া আবেদন ফি এবারও ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি এবং ভোকেশনালে ভর্তির নীতিমালা নিয়ে রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৃথক বৈঠক ডাকা হয়েছে। সূত্র জানায়, কারিগরি শিক্ষায় নারী শিক্ষার্থী ভর্তি বাড়াতে নীতিমালায় এবার নতুনত্ব আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। পলিটেকনিকে ভর্তির জন্য ছাত্রদের জিপিএ-৩ পেতে হবে। কিন্তু ছাত্রীরা জিপিএ-২.৫ পেলেই আবেদন করতে পারবে। এছাড়া নিজ এলাকায় তাদের ভর্তি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
কারিগরি এবং সাধারণ ও মাদ্রাসা সব ধরনের শিক্ষায় ভর্তি বাড়াতে আরও পরিবর্তন আছে। গত বছরের নিয়মানুযায়ী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীরা যে কোনো বয়সেরই হোক-ভর্তি হতে পারবে।
এবারে সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রেও এই নীতিমালা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ সাধারণ ও কারিগরি-মাদ্রাসা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা যে কোনো বয়সে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসাবে ভর্তি হতে পারবে। এতদিন তারা শুধু প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসাবে ফরম পূরণ করতে পারত।
ভর্তিসংক্রান্ত কার্যক্রম এবারও www.xiclassadmission.gov.bd এই ওয়েবসাইট দেওয়া হবে। এখানে ঢুকে আবেদন করতে পারবে। আবেদন ফি মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস নগদ, টেলিটক, বিকাশ, শিওর ক্যাশ ও রকেট ছাড়াও সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে। পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে www.btebadmission.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। ভর্তিকালে শিক্ষার্থীরা রেডক্রিসেন্ট বাবদ যে ফি দেবে, তার ৪০ শতাংশ বোর্ড এবং ৬০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাখবে।
এদিকে আগের বছরগুলোর মতোই অনলাইন পদ্ধতির বাইরে নটর ডেম কলেজ, হলিক্রস কলেজ, সেন্ট জোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ এবারও পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি করবে। এ কলেজগুলো ইতোমধ্যে শিক্ষা বোর্ড থেকে অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।